ডেস্কঃ বাংলার নতুন বছরের শুরুটা সিলেটবাসীর জন্য মোটেই সুখকর নয়। ১৪ এপ্রিলের পর থেকে অর্থাৎ- পহেলা বৈশাখ এর পর থেকে এক সপ্তাহে বিভাগে বিভিন্ন ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের।
কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘরের, বন্যায় ক্ষতি হয়েছে কৃষকের সোনার ফসলের।
সিলেটে বৈশাখের প্রথম দিনই মৃত্যু ঘটেছে নয় জনের। পলেলা বৈশাখে সুনামগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে ৫ জন নিহত হন
জানা যায়, প্রচন্ড ঝড়ে উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের সুলেমানপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন মিয়ার টিন শেড ঘরের উপর পাশ্ববর্তী দুটি বিশাল আকৃতির দুটি গাছ উপড়ে পড়ে চাপা দিলে সাথে সাথেই স্কুল শিক্ষক হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমি বেগম (৩৫) মেয়ে মাহিমা বেগম(৪) ছেলে হোসাইন আহমদ (১) এর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে।
একই দিন জেলার শাল্লা উপজেলার নাছিরপুর গ্রামে বজ্রপাতে মুকুল খাঁ (৫০) ও তার ছেলে মাসুদ খাঁর (৭) মৃত্যু হয়। সকাল সাতটার সময় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
ওই দিনই হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে স্কুল ছাত্রীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে নিহতরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলা সদরের ৩নং দক্ষিণ-পূর্ব ইউনিয়নের তাতারী মহল্লার বাসিন্দা আক্কেল আলীর ছেলে হোসাইন আহমেদ (১২), একই মহল্লার আব্দুর রহমানের মেয়ে রুমা আক্তার (১৩) ও খাগাউড়া ইউনিয়নের এড়ালিয়া গ্রামের সামছুল মিয়ার ছেলে আলমগীর মিয়া (২৫)।
এছাড়াও এদিন সিলেটের গোয়াইনঘাটে অজ্ঞাত এক তরুণের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের সাকেরপেকেরখাল গ্রামের খাল থেকে অনুমানিক ২০/২১ বছর বয়েসি এ তরুণের লাশ উদ্ধার করে থানাপুলিশ।
বৈশাখের ২য় দিন বিভাগে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। এর মধ্যে নবীগঞ্জে বাসের সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুবিনয় দেব (২৩) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছে। বাহুবলে সড়ক দুর্ঘটনায় আলকাছ মিয়া লাদেন (৫৫) নামের এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এই দিন সুনামগঞ্জ শহরের নতুন বাস স্টেশন এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়।
১৫ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮ টা দিকে নীলাদ্রি বাস ও সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লোকাল বাসের মধ্যে সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসময় দুজন গুরুত্বর আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে একজন মারা যান। নিহত ব্যক্তির নাম অমিত দাস (৩০)। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলা ভবানীপুর গ্রামের সর্বা দাসের ছেলে।
অপরদিকে, সিলেটের গোয়াইনঘাটে হাত-পা বাধা অবস্থায় একটি লাশ পাওয়া যায়। শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করে ফেলে রাখা হয় সীমান্তবর্তী একটি টিলায়।
জানা যায়, মোবাইল ফোনে পরিচয়, চ্যাটিং অত:পর জাফলংয়ে এনে মুক্তিপণ চেয়ে না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। এই দিন সিলেটের জাফলং সীমান্ত এলাকা থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। জাফলং সংগ্রামপুঞ্জি বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় পাঁচশত গজ পূর্বে একটি টিলা সংলগ্ন জমি থেকে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর পরদিন (১৬ এপ্রিল ও ৩ বৈশাখ) সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় রাস্তায় গাড়ি ঢুকানোকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে খুন করা হয়েছে। উপজেলার অলংকারি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল বাছিত (২৫) অলংকারি গ্রামের মৃত আফতাব মিয়ার ছেলে। তিনি বিশ্বনাথ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার গোটাটিকরে গাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শিবলু আহমদ (২৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। এই দিন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবতী আত্মহত্যা করেছে।
বৈশাখের ৪র্থ দিন বিভাগে তিন জনের মৃত্যু ঘটে। হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে চালক রিপন মিয়া (২৫) নিহত হন। সিলেট-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে ট্রাক্টর-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। মহাসড়কের তেলিখাল এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মারা যান মোটরসাইকেল আরোহী ওমর আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের ওপারে কয়লা কুড়াতে গিয়ে পুরনো গর্তের মধ্যে পড়ে মাটির চাপায় অনিক (১৯) নামে এক কয়লা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত অনিক উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের কদ্দুস মিয়ার ছেলে।
বৈশাকের ৫ম দিন সিলেট বিভাগে মৃত্যু হয়েছে চারটি। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে আহত এক তরুণী মারা যান, নিহত ওই তরুণীর নাম জহুরা আক্তার সাথী এবং বিষপান করে লতিফা বেগম (৩৪) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। সুনামগঞ্জের ছাতকে ট্রাকের ধাক্কায় শাহীন মিয়া (১৮) নামের ওয়েলডিং ওয়ার্কসপের এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। সিলেট নগরীর কালিবাড়ি এলাকায় নিঁখোজের ৫০ ঘন্টা পর এক শিশুর লাশ মিলে । তিন বছর বয়সী শিশু রাহুল দাসের লাশ পাওয়া যায় তার বাড়ির পাশের বাঁশঝাড়ে। এক সাপ্তাহ আগের ঝগড়ার রেসে এই হত্যা কান্ড কারা হয়।
এর পরদিন ৬ বৈশাক বিভাগে আরো চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও লাখাই উপজেলায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে- বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামের হারুন খানের পুত্র রায়হান মিয়া (৪) ও লাখাই উপজেলার স্বজনগ্রামের দেলোয়ার মিয়ার কন্যা নুসরাত আক্তার (৭)।ছাতকে প্রতিপক্ষের হামলায় জুমেল আহমেদ (২৪) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাও ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের জমির উদ্দিনের পুত্র। একই দিন নগরীর আখালিয়া এলাকায় সাইফুর রহমান সুমন (২৬) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আখালিয়া নোয়াপাড়ার বন্ধন সি-১৩/২ বাসা থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। সুমন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার সাদিপুর গ্রামের আশিকুর রহমানের ছেলে।
এদিকে, পহেলা বৈশাভের পর থেকে বিভিাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ি ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এছাড়া ভারতের পাহাড়ি ঢলে কৃষকের সোনার ফসলে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর বোরো ধান। ফলে নতুন বছরের নতুন মাসটি যেন সিলেটের জন্য মঙ্গল বয়ে নিয়ে আসেনি।
Leave a Reply