1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

এমসি কলেজের ধর্ষনকান্ড সেই নির্যাতিতা নারীর স্বামীকে এবার প্রাণনাশের হুমকি

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৯৮ বার পঠিত

ডেস্কঃ সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে নির্যাতিতা সেই গৃহবধূর স্বামীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত সোমবার (৪ এপ্রিল) সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী।

দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল আহসান বিষয়টি গণমাধ্যম-কে নিশ্চিত করেছেন।

জিডিতে উল্লেখ, গত ২৯ মার্চ সকাল ৯টার দিকে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি সিএনজি অটোরিকশাযোগে ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজ করে। তিনি বাড়িতে না থাকায় তার বাবা ও ছোট ভাইর সাথে খারাপ আচরণ ও হুমকি দিয়ে দিয়ে চলে আসে। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে নাম-ঠিকানা-পরিচয় গোপন রেখে তাকে বিভিন্ন ধরণের কথা-বার্তা ও হুমকি-ধমকি প্রদান করে। গত দুদিন থেকে কয়েকবার কল দিয়ে তাকে ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের ও তার মামলা পরিচালনাকারী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা সিলেট-এর নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ক্ষতিসাধন ও মিথ্যা মামলা এবং জানে মারার হুমকি প্রদান করে। এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের শিকার হন স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এক গৃহবধূ। এরপর পুলিশ ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে ওসিসিতে তিনদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরান থানায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এ গণধর্ষণের ঘটনার ২ মাস ২৮ দিন পর আদালতে ৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসামিরা হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গির মিয়ার পুত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫) , দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পুত্র অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম (২৫) , কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের পুত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫) , সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পুত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনকে (২৭)।

গ্রেফতারকৃত এই ৮ আসামির সকলেই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। ৮ আসামির মধ্যে , সাইফুর রহমান , শাহ মাহবুবুর রহমান রনি , তারেকুল ইসলাম তারেক ও অর্জুন লস্কর , মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ১৯ বছর বয়সী ওই নববধূকে গণধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। ৮ আসামির সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমানে তারা সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে।

এদিকে, ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলার জেলা মনিটরিং কমিটি। পরে বিষয়টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জানানো হয়। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এএইচএম মাহফুজুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রের ২০২১ সালের ১৩ মার্চ মামলার জেলা মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রভাস কুমার সিংহয়ের কাছে এজাহার, চার্জশিটের সার্টিফাইড কপিসহ তথ্যাদি চাওয়া হয়। আর ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত পুলিশের তৎকালীন এসআই মাহমুদা মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের কপি ট্রাইব্যুনালকে দেখান।

এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ ছয়েফ উদ্দিন জানান, জেলা মনিটরিং কমিটি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন রেজুলেশন দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবগত করেছিলেন এসআই মাহমুদা। এরপর আর কোনো সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালকে জানানো হয়নি। এমনকি সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের কপি ট্রাইব্যুনালে দেওয়া হয়নি।

বাদিপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘বছরখানেক আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুটি মামলার বিচার কার্যক্রম একসঙ্গে একই ট্রাইব্যুনালে পরিচালনার জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। এরপর মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লিষ্ট জেলা মনিটরিং কমিটি।

তিনি বলেন, আমাদের জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানোর কোনো হদিস পাইনি। বিষয়টি জানতে পরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের জেএম শাখায় আমরা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করি। সেখান থেকেও কোনো সুস্পষ্ট তথ্য মেলেনি। প্রায় এক বছর যাবৎ থেমে আছে মামলার অগ্রগতি। আমরা মামলার নিয়মিত বিচার কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।’

ডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী আরও বলেন, মামলাকে ‘গলাটিপে শ্বাসরোধ’ করা হচ্ছে। অতীতে কোনো মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যেতে এতো দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার কোনো নজির নেই। সর্বশেষ কোন পর্যায়ে রয়েছে তাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এখন আসামীদেরকেও আর আদালতে আনা হয় না। মামলাটির এমন অবস্থায় মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি এল।

আদালত সূত্র জানায়, লকডাউনের পর আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চললেও কোনো ধার্য তারিখে আসামিদের নিয়ে আসা হয়নি। বর্তমানে মামলার কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মোহিতুল হক চৌধুরীর আদালতে সব আসামির উপস্থিতিতে অপহরণ, গণধর্ষণ ও গণধর্ষণে সহায়তার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়। অভিযোগ গঠনের পর ২৭ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

কিন্তু, বাদীপক্ষ একসঙ্গে একই আদালতে মামলা দুটি চালানোর আবেদন করে উচ্চ আদালতে। আবেদনটি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে যাননি। ওই দিন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ থাকার পরও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে যাননি মামলার বাদীসহ পাঁচ সাক্ষী। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত।

ওই দিন গ্রেফতারি পরোয়ানামূলে মামলার বাদীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে ধরে নিয়ে আসে পুলিশ। একই দিন উচ্চ আদালত শুনানি শেষে আদেশ দেন। তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ আদালতের আদেশের কপি সরবরাহ করা হলে সাক্ষ্যগ্রহণ না করে বাদীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে ২৪ জানুয়ারি আদালতে দুটি মামলার বিচারকাজ এক সঙ্গে শুরু করার আবেদন করলে বিচারক তা খারিজ করে দেন। এরপর উচ্চ আদালতে একটি ফৌজদারি বিবিধ মামলা করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল বেঞ্চ মামলার শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম এক সঙ্গে একই আদালতে সম্পন্নের আদেশ দেন।

এ অবস্থায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করতে জেলা চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক মামলার মনিটরিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অথচ, এক বছর পেরিয়ে গেলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x