1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

কানাইঘাটে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ঢুকে হামলা

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৭৯ বার পঠিত

ডেস্কঃ মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য স্বজনদের উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহতের ঘটনায় আবারো আলোচনায় এসেছেন কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বিভিন্ন মামলার আসামী তোতা মিয়া ও তার ভাইয়েরা। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের ইনছান আলীর বসত বাড়িতে।

এ ঘটনায় কানাইঘাট থানায় বুধবার দিবাগত রাতে ( ১৪ এপ্রিল ) মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তোতা মিয়ার নেতৃত্বে হামলার ২ মিনিটের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর কঠোর সমালোচনা চলছে। সচেতন মহল দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এ ঘটনায় তোতা মিয়া, তার ছেলে ও ৩ ভাইসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় গত বুধবার গভীর রাতে মামলা (নং- ১৬/১৪/০৪/২০২২) দায়ের করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা যায়, তোতা মিয়া ও তার ভাইয়েরা স্থানীয় বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের ইনছান আলীর ভূমি জবর দখলের পাঁয়তারা করলে তিনি বাদী হয়ে তোতা মিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে ১৪৪ ধারায় বিবিধ মামলা (নং- ৩০/২২) দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে বুধবার দুপুরের দিকে থানার এএসআই মোখলেছুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ তদন্ত শুরু করে।

তদন্তকালে পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে হাজির হয়ে তোতা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ইনছান আলী ও তার স্বজনদের উপর হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ নিবৃত্ত করে সেখান থেকে তোতা মিয়াদের সরিয়ে দেন। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তোতা মিয়ার নেতৃত্বে তার ছেলে, ভাইয়েরাসহ স্বজনরা দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইনছান আলীর বসত বাড়িতে ঢুকে অতর্কিত হামলা শুরু করে। তারা ইনছান আলীর বসত ঘরে ঢুকে নারী-পুরুষসহ পরিবারের সদস্যদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও রড, রুল দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে মারধোর শুরু করে। হামলাকারীদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ইনছান আলীর পরিবারের লোকজন পুকুরে ঝাঁপ দেন। বসত ঘরে ঢুকে পড়লে সেখানে গিয়ে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলার হাত থেকে বাঁচতে কান্না-কাটির সুরচিৎকারে শুরু করলে আশপাশের লোকজন এসে তাদের প্রাণে রক্ষা করেন।

এ সময় হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন বাউরভাগ ২য় খন্ড গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৬০), শ্যালক হারুন রশিদ (৫৮), তার ভাই জয়নাল আবেদীন (৩৭) ও জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী শাকিরা বেগম (৩৩)। আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় হারুন রশিদ, শাকিরা বেগমকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মরিয়ম বেগম, জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্য আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রবকেও শারীরিকভাবে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারপিট করা হয়।

হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এএসআই মখলিছুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এ সময় তারা হামলাকারীদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করলে হামলাকারী পুলিশের উপরও চড়া হয়।

এ ঘটনায় আহত হারুন রশিদের ছেলে আব্দুল কাদির বাদী হয়ে তোতা মিয়াসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ওই দিন রাতে কানাইঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে।

এদিকে হামলার দুই মিনিটের একটি ভিডিও বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে জড়িত অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন মামলার আসামী এবং সাংবাদিকদের উপর হামলাকারী জমি জবর দখলকারী বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনকারীসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তোতাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়ে পোস্ট করছেন।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, তোতা মিয়া সীমান্ত এলাকার চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত এবং চোরাচালানীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা। তার পরিবারের সদস্যরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় সব-সময় সন্ত্রাসী স্টাইলে চলাফেরা করে এবং বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে।

তবে থানায় তোতাসহ ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা এফআইআর হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ হামলার নেতৃত্বদানকারী তোতাকে বা মামলার কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসামীদের গ্রেফতার করতে এলাকায় পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে। এ হামলাকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পদ-পদবী ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করলে রেহাই পাবেনা। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও পরিবারের স্বজনদের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে দুর্ণীতিবাজ ও বিভিন্ন ঘটনার সাথে জড়িত তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ব্যবস্থা নিব এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতিও তিনি আহŸান জানান।

উল্লেখ্য, সুরইঘাট সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানে নেতৃত্বদানকারী মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ী, কয়েকটি মামলার আসামী তোতা মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে এলাকায় নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির অনেক নেতাকর্মী উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x