কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পাড়ুয়া বদিকোনা গ্রামের দিনমজুর শানুর মিয়া। স্ত্রী, দুই ছেলে এক মেয়েসহ পরিবার চলে তার আয় দিয়ে।কাজ না থাকায় খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।
শুধু শানুর মিয়া নয়,উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষদের কেউ-ই ভালো নেই। তারা বলছেন, করোনা ও বন্যার চেয়ে ক্ষুধা ভয়ংকর রূপে দেখা দিয়েছে তাদের কাছে।করোনার ভয়াবহতা ও বন্যার পানি কমলেও দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার প্রধান কর্মসংস্থান পাথর কোয়ারীগুলো বন্ধ রয়েছে।একদিকে হঠাৎ করে বন্যা অন্যদিকে পাথর কোয়ারী বন্ধ। এ যেন মরার উপর খরার ঘা।
দীর্ঘ করোনা, ভয়াবহ বন্যা, বন্ধ পাথর কোয়ারি ত্রিমুখী সংকটে নিম্নমধ্যবিত্ত কর্মজীবী মানুষের আর্তনাদে হয়ে উঠছে আকাশভারী। উপজেলার প্রায় সিংহভাগ মানুষের কর্মসংস্থান হারিয়ে অসহায়ত্বের করুণ চিত্র,ভয়াবহ বন্যার বিভীষিকাময় ধ্বংসলীলায় কৃষক আর দিনমজুর মানুষ অজানা আতঙ্কে অস্থির দিশেহারা।ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের করুণ চিত্র নীরব কান্না আঁকুতি আর্তনাদ হৃদপিন্ডে লুকিয়ে থাকা জমাটবাঁধা কষ্ট নিত্য রোগে শোকে ভোগা মানুষের জীর্ণ কুটিরের অভাবের তাড়না ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকায় পাথর সংশ্লিষ্ট জীবিকা নির্বাহকারী লক্ষাধিক শ্রমিক ব্যবসায়ী রোজগার বঞ্চিত হয়ে পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ অবস্থায় উঠতি বয়সী বেকার কিশোরেরা জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপকর্মে। প্রতিনিয়ত চুরি ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক পাথর সিলেটের পাথর যোগান দিয়ে আসছিল। শ্রমিক কর্তৃক আহরিত এ পাথর বিপনন এবং প্রক্রিয়া করণে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় হাজারো স্টোন ক্রাশার। এসব স্টোন ক্রাশারে আরও লক্ষাধিক শ্রমজীবি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়ে এক সময়ের অবহেলিত অঞ্চল ক্রমশঃ সমৃদ্ধ জনপদে রুপান্তরিত হয়। স্থানীয়ভাবে আহরিত পাথরের গুনগত মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। পাথরের আর্শীবাদে সিলেটের এ প্রান্তিক জনপদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিপুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বৃহৎ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান না থাকায় একমাত্র পাথরকে কেন্দ্র করেই সৃষ্ট জীবিকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মক্ষেত্র সিলেটের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।কিন্তু বর্তমানে সব কিছু বন্ধ থাকায় এলাকায় চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ সুনশান নীরবতা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বন্যার কারনে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তারপরও সরকার যদি এখনও পাথর কোয়ারী খুলে দেয় তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষজন ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারবে।পাশাপাশি সরকার পাবে রাজস্ব।
Leave a Reply