তিনি বিশ্ববিখ্যাত এক ইলমী ও আমলী পরিবারের সন্তান যার পূর্বসূরি বা উত্তরসূরি কোনোদিকেই আলোর কমতি নেই। একজন মানুষকে ইনসানে কামিল বিবেচনা করার যতগুলো মানদণ্ড আছে, সেখানে তিনি বিপুলভাবে উত্তীর্ণ একজন মহান মানুষ। কেনই বা হবেন না? তিনি যে সুলতানে সিলেট শাহ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহির সফরসঙ্গী শাহ কামাল রহমাতুল্লাহি আলাইহির বংশধর। বেলায়তের বিভিন্ন খাসায়েস থেকে একটা সারনির্যাস তো উনার চরিত্রে রেখাপাত করবে এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
বাবা ছিলেন রাহবারে মিল্লাতে মোস্তাফা। ছিলেন বিশ্বনন্দিত আধ্যাত্মিক পুরুষ, যার মানবিক বিশালতা ছিলো বেমিছাল। যার খিদমতের পরিধি মাশরিক থেকে মাগরিব পর্যন্ত বিস্তৃত। ”শামসুল উলামা” উপাধিতে ভূষিত ছিলেন অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই। ইলমে হাদীস, তাফসীর, কিরাত, তাসাওউফ ও খিদমাতে খালকের এক মহীরুহ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি। যিনি হিদায়তের বিচ্ছুরিত আলোর সবুজাভ মিনারের দিকে ডেকে গেছেন প্রায় এক শতাব্দীকাল ধরে। নির্মাণ করে গেছেন শত শত আলোর নকীব। উনার তৈরি করা ছোট ছোট মিনারগুলো এখন পূর্ণতায় পৌঁছে আলো ছড়াচ্ছে বিশ্বময়। যে আলো থেকে পথের দিশা খোঁজে পাওয়া মানুষের সংখ্যাও অগণিত-অসংখ্যতায় পৌঁছেছে।
উনার দাদাও ছিলেন সিলেটের বিখ্যাত আলেমগণের একজন। বিশেষ করে পূর্ব সিলেটে যার ইলমি যোগ্যতার সুখ্যাতি ছিলো। তিনি মুফতি আব্দুল মজিদ চৌধুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। শুধু তাই না, মাতৃকুলের যে চেরাগ থেকে তিনি আলোর স্রোতে অবগাহন করেছেন, সেই দিকটা তো আরো উজ্জলতর। উনার নানাজান জৌনপুরী সিলসিলার এক নূরানী উৎসমুখ, রাহবারে শরীয়ত ও তরীকত হযরত আবু ইউসুফ শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুব বদরপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
যার কথা বলছি, তিনি হলেন আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী, বড় ছাহেব কিবলাহ হিসেবে খ্যাত এই মানুষটিকে একজন প্রচারবিমুখ হাতেমতাঈ হিসেবে চিনে সমাজ ও সমাজের মানুষ। একাধারে কোটি জনতার মুরশিদ হিসেবে রূহানী প্রশিক্ষণ প্রদান করেন তিনি। হাজার হাজার এতিমের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন তিনি। লক্ষ লক্ষ কারীদের খাস উসতায তিনি। অসংখ্য উলামায়ে ইসলামের ইলমে হাদীসের শায়খ হিসেবে কাজ করেন তিনি। তবুও মিডিয়া বা পত্রিকার হেডিং তাঁর টার্গেট নয়, কখনোই ছিলো না। তিনি আত্মগোপন করেই চালিয়ে যেতে চান খিদমতে খালক, আত্মপ্রচার করে নয়। এতিম, বিধবা, আতুর, বিকলাঙ্গ, গৃহহীন, অসুস্থ, চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের দায়িত্ব নিয়ে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কর্মবীরত্বের ধারাবাহিকতায় আজ তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েও অমর, অক্ষয়, অতুলনীয়। এই প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনীর যুগ ও সময়ে তিনি যেনো বিরাট ব্যতিক্রম কেউ। উনার কোনো মোহ নেই। উনার কোনো উপমাও যেনো নেই। উনাকে সংজ্ঞায়িত করার কোনো বিশেষণের প্রয়োজনও পড়ে না।
⬛ যেভাবে শুরু এই খিদমাহ—
উনার পিতা শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুদীর্ঘকাল দ্বীন ও মিল্লাতের খিদমতে বিশ্বের দিকেদিকে সফর করে গেছেন। তাঁর বিশাল কর্মব্যস্ততা ছিলো মূলত বিশাল খিদমতের আলোকেই। তিনি জাতির জন্য অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, খানেকাহ নির্মাণ করে গেছেন, যা আর কেউ পারেননি। তাই খিদমতে খালকের বিষয়টা দেখার জন্য উনার বড় সন্তানকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। স্বীয় পিতা ও মুরশিদের কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে সেই দায়িত্ব আনজাম দিতেন বড় ছাহেব কিবলাহ। সেই থেকে এতিম, অনাথ, মিসকিন, অসহায় মানুষের প্রতি উনার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই উনার নসবনামায় মানুষের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা জড়িয়ে ছিলো বহুকাল ধরে। কেননা হঠাৎ কেউ মানবদরদী হতে পারে না, এজন্য বংশগত ঔদার্যবোধের কোনো বিকল্প নেই। নোট ও ভোটের দানবীর তো আমাদের দেশে অভাব নেই। উনারা ঝোপের মাঝে কুপ মারেন, এমনিতে টেকা খরচ করেননা।
২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলার ইনতেকালের পর তিনি দুনিয়ার অন্যান্য মুআমেলা থেকে নিজেকে ফারেগ করে তরীকতের বাইআত, তালিম-তরবিয়ত, কিরাত প্রশিক্ষণ ও খিদমতে খালকের মাধুর্যে নিজেকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করে নেন। উনার ধ্যানে-জ্ঞানে মানুষ ও মানবতার আত্মিক, নৈতিক ও জৈবনিক সেবা ছাড়া আর কিছুই নেই। এমন নয় যে অন্যান্যের মতো দুর্যোগ এসেছে বলে উনি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন; বরং এই সেবা ও সাধনা উনার জীবনেরই নিত্যকার প্রতিচ্ছবি। তাই তিনি কতো টাকার ত্রাণ তৎপরতা চালালেন তা কোনো ধর্তব্য বিষয় নয়, যদিও উনার সমান সহযোগিতা এখনও কেউ করতে পারেননি।
⬛ এভাবেই চলবে জীবনের চাকা—
জীবন হয়ত থেমে যাবে, পরিবেশ হয়ত বদলাবে, মাকসুদে মানযিল হয়ত আরো দূরে চলে যাবে, কিন্তু আল্লামা বড় ছাহেব কিবলার এই খিদমত চলবে ইনশাআল্লাহ। কেননা এই লক্ষ্যে জীবন কুরবানী করার মানুষ তিনি তৈরি করে নিয়েছেন। উনার খিদমতের ধারা একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। তিনি দুটি আন্তর্জাতিক চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মুসলিম হ্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল ও লতিফি হ্যান্ডসের কর্ণধার। সুবিশাল পরিকল্পনা ও দক্ষ জনবল দ্বারা তিনি যেসকল প্রকল্প গ্রহণ করেন, তার মধ্যে বন্যা, খরা, অাগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দ্রুততম সময়ে গৃহনির্মাণ, নলকূপ স্থাপনসহ পূনর্বাসন প্রক্রিয়া অন্যতম। এতিম বাচ্চাদের পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ, যোগ্য ও স্বনির্ভর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা তিনি গ্রহণ করেছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। অন্ধত্ব ও বধিরতা দূরীকরণে চিকিৎসা সেবা, আতুর ও বিধবাদের সেবা ও সহযোগিতার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া উনার বহুদিন ধরে চলমান রুটিন ওয়ার্ক। তিনি এভাবেই বিলিয়ে দিয়ে যেতে চান জীবনের সারাটা সময়, শ্রম ও ভালোবাসা।
⬛ এভাবে আর কে করতে পারবে—
তিনি উপস্থিত আছেন, উনার সেবা চলছে। তিনি সফরে, তবুও সেবা থেমে নেই। তিনি হজ্বে গেছেন, সেখান থেকেও খবর নিচ্ছেন। তিনি দুআ করছেন, উনার দুআতে এতিম-অনাথের কথা আছে। তিনি কখন ঘুমান, কখন অবসর থাকেন, কখন আরাম-আয়েশ করেন, তার কোনো নজির কারো চোখে পড়ে না। সারাক্ষণ, সবসময় নিজেকে একটা সুনির্দিষ্ট সেবা ও সাধনায় জড়িয়ে রাখার এক অপূর্বত
Leave a Reply