1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

সিলেটের প্রতিবাদী রাখী

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : বুধবার, ১১ মে, ২০২২
  • ১৫০ বার পঠিত

ডেস্ক: বিয়ের কয়েক বছর আগে কিশোরী বয়সেই অসুখের কারণে পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করা হয় রাখী ভট্টাচার্যের। এতে দাগ পড়ে তলপেটে। এ নিয়ে বিয়ের পর স্বামী ও তার পরিবারের নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন রাখী। অভিযোগ তোলা হয় সিজারের। এ নিয়ে মেয়ের স্বামীর পরিবারের কাঠগড়ায় দাঁড়ান রাখীর পিতা হরিদাস ভট্টাচার্যও। সালিশের রায়ে তিনি মেয়ে রাখীর মেডিকেল ফিটনেস টেস্টও করান। এতে পজেটিভ রিপোর্ট এলেও মন গলেনি স্বামী পল্লব ভট্টাচার্য ও তার পরিবারের। রাখীর ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। এক বছরের নির্যাতনে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে রাখীকে। গত ২৫শে জুলাই নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হন তিনি ভর্তি করা হয় ওসমানী হাসপাতালে। এবার আর মুখ বুঝে সব সইছেন না রাখী। নির্যাতনের পর নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে থানায় নারী নির্যাতন মামলা করেছেন। তার মামলায় স্বামী পল্লব, তার ভাই পাপ্পু ও বোন অর্চনা পলাতক রয়েছে।

এমন ঘটনায় সিলেটের টিলাগড়ের গোপালটিলা এলাকায় তোলপাড় চলছে। রাখী ভট্টাচার্য মৌলভীবাজার লামুয়া কমিউনিটি হেলথ কেয়ারের কর্মকর্তা। আর তার স্বামী পল্লব ভট্টাচার্য বালাগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। টিলাগড়ের গোলাপটিলা এলাকার বাসিন্দা পল্লব। পারিবারিকভাবে গত বছরের ৫ই মার্চ বিয়ে হয় তাদের। কিন্তু বিয়ে হলেও সুখ নেই রাখী ভট্টাচার্যের। টানা এক বছর স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতন সহ্য করে সংসার করতে হয়েছে। গত ২৮শে এপ্রিল সিলেটের শাহপরান (রহ.) থানায় এ মামলা দায়ের করেন রাখী।

মামলার এজাহারে রাখী জানান, বিয়ের পর তার বেতনের সমুদয় টাকা শাশুড়ির কাছে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এতে সংসারের কথা চিন্তা করে রাখী তার হাত খরচের টাকা রেখে বাকি টাকা শাশুড়ি অর্চনা ভট্টাচার্যের কাছে দেন। এরপরও যৌতুক হিসেবে পিতার বাড়ি থেকে আরও ৫ লাখ টাকা এনে দেয়ার দাবি করেন স্বামী ও শাশুড়ি। দেবরকে বিদেশ পাঠানোর জন্য এই টাকা দাবি করা হয়। এতে রাখী অপারগতা প্রকাশ করলে তার ওপর নির্যাতন শুরু করা হয়। অভিযোগ তোলা হয় বিয়ের আগে সিজারের।

এজাহারে রাখী জানান, পিত্তথলির অপারেশনের জায়গায় গর্ভপাতের অস্ত্রোপচার দাবি করে তার ওপর অপবাদ দেয়া হয়। এ নিয়েও স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন নির্যাতন চালায়। এছাড়া, বেশির ভাগ সময় তাকে উপবাসও রাখা হতো। সংসারের কথা চিন্তা করে রাখী তার পরিবারের কাছে সবকিছু জানাতো না।

রাখীর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক পর্যায়ে রাখীর গর্ভপাতের অস্ত্রোপচার হয়েছে দাবি করে সালিশ বসানো হয়। আর ওই সালিশে ডাকা হয় রাখীর পিতা হরিদাস ভট্টাচার্যকে। সালিশের সিদ্ধান্তে রাখীর ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে; রাখী শারীরিক ভাবে সন্তান ধারণ করতে সক্ষম। এরপরও স্বামী পল্লবের পরিবার মেনে নেয়নি। তারা নানা ভাবে রাখীকে নির্যাতন করতে থাকে। নির্যাতনের কারণে রাখী কয়েক মাস আগে তার পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিছুদিন পিতার বাড়িতে অবস্থানকালে আদালতের সমন যায় বাড়িতে। রাখীর স্বামী পল্লব ভট্টাচার্য এই মামলার বাদী। স্বামী-স্ত্রীর পৃথক বসবাসের আর্জি জানিয়ে পল্লব আদালতে এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলার কথা শুনে রাখী কাতর হয়ে পড়েন। শত নির্যাতনের মুখেও সংসার টিকিয়ে রাখতে মামলা করেননি। উল্টো স্বামী এখন মামলা করেছে। এতে ক্ষুব্ধ হন রাখী ভট্টাচার্য। ছোট ভাই অনিক ও পিতা হরিদাসকে সঙ্গে নিয়ে গত ১লা জুলাই তিনি স্বামী পল্লবের কাছে যান। মামলার কারণ জানতে চান। এতে পল্লব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পল্লব লাঠি দিয়ে রাখীকে বেধড়ক মারধর করেন। এতে রাখীর পিতা ও ভাই এগিয়ে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত রাখী ভট্টাচার্য। তাকে তাৎক্ষণিক ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় ৩রা এপ্রিল শাহপরান (রহ.) থানায় অভিযোগ দিলে স্থানীয় ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ এ ব্যাপারে সালিশ বৈঠক বসান। সালিশে তিনি ঘটনার নিষ্পত্তি করে রাখীকে তার স্বামী পল্লবের গোপালটিলাস্থ বাসায় উঠিয়ে দেন। একই সঙ্গে স্থানীয় লোকজনকে বিষয়টির দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেন। এই অবস্থায় স্বামীর সংসারে এলেও স্বামী, শাশুড়ি এবং স্বজনদের নির্যাতন চলছিল। ২৫শে এপ্রিল রাখীর কাছে ফের দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে পল্লব। এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পল্লব, দেবর পাপ্পু ও শাশুড়ি অর্চনা দলবেঁধে রাখীকে মারধর করে। এতে কয়েক বার সংজ্ঞা হারান রাখী ভট্টাচার্য। বিষয়টি জানার পর স্বজনরা স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে রাখীকে সিলেট নগরীর গোপালটিলার স্বামীর বাসা থেকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় গত ২৮শে জুলাই রাখী শাহপরান (রহ.) থানায় মামলা দায়ের করেন।

রাখী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ‘আমার চাকরির সব টাকা তাদের হাতে তুলে দেই। স্বামী, শাশুড়ির মন জয় করতে শত চেষ্টা করি। কিন্তু আমাকে অপবাদ দিয়ে যৌতুকের টাকার জন্য বার বার চাপ প্রয়োগ করে। আর ওই টাকা না দেয়ায় মারধর করা হয়।’তিনি জানান, ‘কোনো শিক্ষিত সমাজে এ ধরনের ঘটনা মানায় না। এক বছর সহ্য করে সংসার টিকানোর চেষ্টা করেছি। এখন আর পারছি না। ওরা আমাদের মেরেই ফেলবে। এ কারণে প্রতিবাদী হয়ে মামলা করেছি। এখন আইনই সব দেখবে।’

এদিকে মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছেন বালাগঞ্জের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও রাখীর স্বামী পল্লব ভট্টাচার্য। কর্মস্থলেও তিনি রয়েছেন অনুপস্থিত। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার সাব- ইন্সপেক্টর দিবাংশু পাল জানিয়েছেন, পল্লব সহ আসামিকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। পল্লব কর্মস্থলেও যাচ্ছে না। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সক্রিয়।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x