1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন

সিলেটে বিএনপি নেতা হত্যায় জড়িত কে এই সম্রাট?

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০২২
  • ২১৯ বার পঠিত

আম্বরখানার ‘মূর্তিমান’ আতঙ্কের নাম সম্রাট। সোনালী ব্যাংক থেকে পলাশ হোটেল পর্যন্ত ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে গোটা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের একটি দল। ছাত্রলীগের গ্রুপ পরিচয়ে তারা আম্বরখানায় বেপরোয়া।

চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি সবই করে নগরের ব্যস্ততম ওই এলাকায়। সম্রাটের দাপটের কাছে পুলিশও অসহায়। সেই সম্রাটের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করার কারণে প্রাণ দিতে হলো সিলেট জেলা বিএনপি’র সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আফম কামালকে। এই ঘটনায় নাড়া দিয়েছে আম্বরখানাবাসীকে। ভয়ে কাঁপছে নগরের বড়বাজার। বিজ্ঞাপন ঘটনার পর গোটা এলাকায় আতঙ্ক নেমে এসেছে।

হতবাক সিলেটের রাজনৈতিক মহলও। সম্রাটের পুরো নাম আজিজুর রহমান সম্রাট। তার বাড়ি সিলেটের লামাকাজি এলাকায়। আম্বরখানা মনিপুরী এলাকার ভাড়া বাসায় সে বসবাস করে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আম্বরখানা এলাকায় বসবাস করার সুবাদে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সম্রাট এক সময় আম্বরখানা এলাকায় ‘টোকাই সম্রাট’ নামে পরিচিত ছিল। ওই সময় সে ছাত্রদলের একটি গ্রুপের সঙ্গে ওঠাবসা করতো।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সে খোলস পাল্টে ফেলে। হয়ে যায় ছাত্রলীগ কর্মী। সে ছাত্রলীগের স্থানীয় দর্শনদেউরী গ্রুপের কর্মীদের সঙ্গে কয়েকদিন ওঠাবসা করলেও তার ঠাঁই হয়নি ওখানে।  ছাত্রলীগের ওই গ্রুপের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন- সম্রাটের সঙ্গে সব টোকাই ও উচ্ছৃঙ্খল তরুণরা থাকতো।

নানা বিতর্কিত ঘটনার মূলহোতা ছিল তারা। মাদক সেবনসহ নানা ঘটনায় জড়িত তারা। এ কারণে সম্রাট ও তার সহযোগীদের গ্রুপে জায়গা দেয়া হয়নি। এরপর সম্রাট অবস্থান নেয় আম্বরখানা এলাকার মারজান গলিতে। এখন ওই গলিই তার আস্তানা। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে সম্রাট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছা পোস্টার, ছবি পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয়।

আম্বরখানা এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- আম্বরখানার প্রতিটি দোকান থেকেই চাঁদাবাজি করতো সম্রাট। প্রতিদিন বিকাল হলেই উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের নিয়ে সে আড্ডায় বসতো। সোনালী ব্যাংকের নিচে মানি এক্সচেঞ্জ, এলাকার খাবার হোটেল, ফলের হকার, কাঁচাবাজারসহ সব এলাকার ব্যবসায়ীরা হচ্ছেন তার চাঁদার উৎস। অনেকটা বাধ্য হয়েই তাকে চাঁদা দিতো ব্যবসায়ীরা।

টি ল্যান্ড হোটেলে রাতে জুয়ার বোর্ড বসায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ওই জুয়ার আস্তানায় খেলে। তারা জানান- পুলিশের কেউ কেউ গিয়েও মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে আড্ডা দিতেন। এ কারণে সম্রাট আরও আস্কারা পেয়ে যায়। এ নিয়ে আম্বরখানার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার কয়েক দফা উত্তেজনা হয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সদুত্তর পাননি ব্যবসায়ীরা। ফলে সম্রাটের অত্যাচার নীরবে সহ্য করে যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা।

সম্রাটের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগের গ্রুপের কর্মীরা শুধু মারজান গলিতেই নয়, আম্বরখানা এলাকার হোটেল পলাশের সামনে, সাপ্লাই এলাকা, কামাল গলি, লেইস মার্কেটের ভেতরে বসে আড্ডা দিতো। এ কারণে তাদের অত্যাচারে ওইসব এলাকার মানুষও অতিষ্ঠ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আম্বরখানা, বড়বাজার, বিমান অফিসের সামনে খাসদবির এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় উঠে আসে সম্রাটের ছিনতাই গ্রুপের নাম। পুলিশের কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। বরং দিনে দিনে আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলো সম্রাট ও তার সহযোগীরা। সম্রাটের প্রধান সহযোগী শাকিল ও মিশু। শাকিল ও মিশু বসবাস করে খাসদবির এলাকায়। শাকিলের মূল বাড়ি বরিশালে। তবে- তার বেড়ে ওঠা খাসদবির এলাকায়। এখন সে এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত। তার সমন্ধি সম্পর্কে মিশু। সম্রাটের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অপরাধ চক্রের সব নিয়ন্ত্রণ করে তারা দু’জন। একজন ছিনতাইকারীদের সর্দার ও অপরজন মাদক চক্রের হোতা।

নিহত আফম কামালের সহকর্মীরা জানিয়েছেন- আফম কামালের বাসা ছিল বালুচরে। আম্বরখানা এলাকা দিয়ে যাতায়াত করলেও তিনি সেখানে নিয়মিত বসতেন না। বিএনপি নেতা চমন, জেহিনের সঙ্গে সম্পর্কের সুবাদে ওই এলাকায় যাতায়াত করতেন।  আম্বরখানার মারজান মার্কেটে রয়েছে নিহত আফম কামালের ভগ্নিপতি জৈনউদ্দিনের ট্রাভেলস ব্যবসা। মাঝে মধ্যে ওখানে এসে বসতেন আফম কামাল। তবে নিয়মিত না।

অক্টোবরের শেষ দিকের ঘটনা। একদিন খবর আসে  জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে ট্রাভেলসের ভেতরে আটকে রেখেছে সম্রাট ও তার সহযোগীরা। এ খবর পেয়ে বন্ধু চমনকে নিয়ে সেখানে যান আফম কামাল। তারা ওখানে গিয়ে দেখেন জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে দোকানের ভেতরে আটকে রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ঘেরাও করে রেখেছে। এ সময় কামাল ও চমন গিয়ে দোকানের ভেতর থেকে জৈনউদ্দিন ও তার ছেলেকে উদ্ধার করেন। চাঁদা না দেয়ার কারণে সম্রাট ও তার লোকজন দোকানের ভেতরেই তাদের আটকে রাখে। এতে ক্ষুব্ধ হন ব্যবসায়ীরা। উদ্ধারের পর কামালসহ ব্যবসায়ীরা সম্রাট ও তার লোকজনকে মারধর করেন। পরে তারা চলে যায়।

এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাদের সহযোগিতায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সম্রাটের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। এ মামলায় আসামি করা হয় কামালকে। মারধরের ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ হলে আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয় সম্রাট। নিহত আফম কামালের বন্ধুরা জানিয়েছেন- সম্রাট কামালের ওপর হামলা চালাতে একাধিকবার টার্গেট করে। এ কারণে বন্ধুরা কামালকে আম্বরখানা দিয়ে একা চলতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু আফম কামাল তাদের নিষেধ মানেননি। তারা জানিয়েছেন- ঘটনার দিন রাতেই ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল কামালের।

কিন্তু হঠাৎ করে ঢাকায় যাওয়া বাতিল হয়ে যায়। এরপর তিনি চৌকিদেখী এলাকায় গিয়ে বন্ধু চমনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে বালুচর বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দেন। খাসদবির এসে আরও কিছু সময় কাটান। সেখানে কিছু সওদাপাতি কিনেন। বড়বাজার গলির গোয়াইপাড়া গলির মুখে আসা মাত্র তার ওপর হামলা চালানো হয়। এবং টার্গেট করে কামালকে হত্যা করা হয়। বড়বাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন- এ ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গোয়াইপাড়া এলাকার গলির মুখ অপরাধের আস্তানা গড়ে উঠেছে অনেক আগে থেকেই। সম্রাট গ্রুপের কিছু সদস্য সব সময় ওই এলাকায় আড্ডা দিতো। তাদের কাছে স্থানীয় লোকজন জিম্মি।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x