1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন

২০০৪ সালের বন্যার চেয়ে বেশি ঝুকিতে সিলেট

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২
  • ৫১৯ বার পঠিত
ফাইল ছবি

ডেস্কঃ সিলেটের অনেক স্থানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বন্যার্ত মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বুধবার দুপুর। নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাষিটুলা, বেতের বাজার, কানিশাইলের অন্তত ২০টি পাড়া। নদীর উপচে পানি ঢুকেছে ওই জনপদে। কয়েক হাজার বাসা-বাড়ি তলিয়ে গেছে। ওই এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। ঘাষিটুলা ও বেতের বাজার থেকে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।

ঘাষিটুলা এলাকার ফরিদ আহমদ জানিয়েছেন- তিনদিন ধরে তারা পানিবন্দি। অনেক বাড়িতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ নেই তারা অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে।মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্র কম। এতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও জায়গা হবে না। আর কেন্দ্রে যারা আছেন তারা শুকনো খাবার খাচ্ছেন।

নগরের তালতলা পয়েন্ট। চারদিন ধরে পানিবন্দি ওই এলাকার মানুষ। পয়েন্টের কাছেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যালয়। কোমর পানিতে নিমজ্জিত ফায়ার সার্ভিসের অফিস। এই কার্যালয়ে কোনো কার্যক্রম নেই।

এক কর্মচারী জানালেন- পানি উঠে যাওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম স্টেডিয়াম এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অস্থায়ীভাবে স্টেডিয়াম এলাকা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তালতলার অর্ধশতাধিক দোকানপাটে পানি ঢুকেছে। কালীঘাটের অবস্থা শোচনীয়। সুরমা নদীর তীরবর্তী প্রধান এ বাণিজ্যিক এলাকার অবস্থান।তিনদিন ধরে গোটা এলাকা পানির নিচে। শতশত পণ্যবাহী ট্রাক নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল খালাস করতে পারছে না।পাইকারি আড়তগুলোতে কোমর পরিমাণ পানি। সার্কিট হাউসের সামনে থেকে সুরমা নদীর তীরবর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাকা পানির নিচে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন- পানি উঠে যাওয়ায় কালিঘাটে কয়েক কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। বাণিজ্যিক এলাকা কাজীরবাজারের অবস্থাও একই। কাজীরবাজারের আড়তগুলোও পানিতে ভাসছে। নগরের উপশহর। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক কার্যালয় রয়েছে ওখানে। গোটা উপশহরই পানিতে ভাসছে। হাজারো বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ইতিমধ্যে শতাধিক পরিবার বাসা-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। কিন্তু সেখানে অনাহারে, অর্ধাহারে রয়েছে মানুষ।

নদী তীরবর্তী শেখঘাটের আশরাফ মিয়ার বাসা। জানালেন- গত দুইদিন ধরে গ্যাস নেই। লাইনে পানি ঢুকে যাওয়ার কারণে দুইদিন ধরে তারা অনাহারে রয়েছেন। গতকাল বিকালে নতুন করে লাইন টেনে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করেছেন। কাজীরবাজার বস্তি এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তারা জানিয়েছেন- বস্তি এলাকায় কোমর পানি। এখন পর্যন্ত তারা কোনো জনপ্রতিনিধির দেখা পাননি। পানিবন্দি অনেক মানুষ অভুক্ত। ওই এলাকার কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সন্তু জানিয়েছেন- তালতলা এলাকায় তিনি অবস্থান করছেন। সেখানে কয়েকটি পরিবারের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করছেন। তার ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাজ আহমদ জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে পানিবন্দি ওয়ার্ডগুলোতে বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গতকাল পর্যন্ত তিনি নিজ উদ্যোগে তারা এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। তিনি সহ কয়েকজন কাউন্সিলর গতকাল দুপুরে সিলেট সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হকের সঙ্গে দেখা করেছেন।ত্রাণ পেলে তারা বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণ শুরু করবেন বলে জানান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ত্রাণ কার্যক্রমের প্রধান রুহুল আলম জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে অন্তত দুই হাজার মানুষ রয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য সফর শেষে আজ সিলেটে আসবেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।তিনি সিলেটে এসে পৌঁছলে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান নগরের এই অবস্থায় সিলেটের উপজেলাগুলোর বন্যা পরিস্থিতি দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে।

ইতিমধ্যে জেলার ১৩টি উপজেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড গতকাল বিকালে সর্বশেষ তথ্যে জানিয়েছে- সিলেটের সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে, সিলেট নগর, কুশিয়ারার পানি অমলসীদ ও শেওলা এলাকায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া জৈন্তাপুরের সারি নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। গত তিনদিন ধরে একই অবস্থা বিরাজ করছে। উজানের ঢল অব্যাহত থাকার কারণে সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানাইঘাট উপজেলা। এ উপজেলার সদরে কোমর পানি। এ উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- কানাইঘাটে সুরমার প্রবল স্রোত অব্যাহত থাকার প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো লোকজনে ঠাসা। গত তিনদিন ধরে শুকনো খাবার খেয়ে তারা বসবাস করছেন।

কানাইঘাট সদরের বাসিন্দা ইমরান আহমদ জানিয়েছেন- সুরমা পানি বাড়ছে। এতে করে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে কানাইঘাটে গবাদিপশু সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই কম দামে পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। সুরমার সঙ্গে কানাইঘাটের নদী তীরবর্তী এলাকা একাকার হয়ে গেছে বলে জানান তিনি। জৈন্তাপুরে গতকাল বিকালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৭০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।

জৈন্তাপুরের চারিকাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন- তার এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ২০০৪ সালের বন্যা হতে বেশি প্লাবিত হয়েছে এবারের বন্যায়।

এদিকে- বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সংকট চলছে। টিউবওয়েলগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সদরের টুকেরবাজার, কান্দিগাঁও, মোগলগাঁও, জালালাবাদ এলাকার বেশির ভাগ গ্রাম এখন পানির নিচে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে শতাধিক গ্রামের। বিশ্বনাথের খাজাঞ্চি ও লামাকাজী ইউনিয়নে পানি বেড়েছে। হাওর এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছেন।

সিলেটে বন্যার্তদের পাশে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী: গতকাল সিলেটের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুল হক। নগর ও আশপাশের এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে তারা ত্রান বিতরন করেন।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারেও আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন- সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত আছে। আমরা আজকে সিলেটের দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখছি।

এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কানাইঘাটে সিলেট জেলা বিএনপির ত্রাণ বিতরণ: সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেছেন, টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটজুড়ে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। লাখো লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপত্র সহ নানা সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বুধবার সিলেট জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে কানাইঘাট উপজেলার খেয়াঘাটে বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।

এ সময় তিনি কানাইঘাট উপজেলার বন্যা কবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন। বন্যার্তদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। এ সময় জেলা বিএনপি, কানাইঘাট উপজেলা বিএনপি অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ বিতরণকালে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, জেলার সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক দিদার ইব্‌নে তাহের লস্কর ও জেলা বিএনপি নেতা মাহবুব আলম।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x