1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
৬ষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনঃ দক্ষিণ সুরমায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস জালালাবাদ থানা রিকশা ও রিকশাভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের মে দিবস পালন দক্ষিণ সুরমা রেস্তোরা মালিক সমিতি’র জরুরী সভা অনুষ্ঠিত গরম থেকে বাঁচতে ট্রাফিক পুলিশদের এসি হেলমেট দিলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার দক্ষিণ সুরমা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভায় শ্রমিকদের যথাযথ মুল্যায়নের দাবী দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে জুয়েল আহমদ যারা কথায় কথায় স্যাংশনস দেয় তারা ঘরে ঢুকে মানুষ হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা ব্রিজের কাজ না করেই ১৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে নিজাম এন্টারপ্রাইজ

ভয়াবহ বিপর্যয় অবস্থায় সুনামগঞ্জ মানুষের বাঁচার আকুতি: গরু-ছাগল মরে ভাসছে

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
  • ১৮৮ বার পঠিত

ভয়াবহ বিপর্যয় অবস্থায় সুনামগঞ্জ। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাড়িঘর, সড়ক। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। বিদ্যুৎ নেই। মোবাইল সংযোগ নেই। ক্রমাগত পানি বাড়ায় দিশাহারা আশ্রয়হীন মানুষ। তারা উঁচু আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু চারদিকে পানি থাকায় সেই চেষ্টাও সফল হচ্ছে না। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনা খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষজন বাঁচার আকুতি করছেন, গরু, ছাগল, বকরি, কুকুর, বিড়াল, শিয়াল মরে ভাসছে।

বন্যায় দোকানপাট বন্ধ থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনা যাচ্ছে না। জরুরি সেবাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সব ক’টি উপজেলা এখন কমবেশি পানির নিচে। পাহাড়ি ঢলের পানি বিরামহীনভাবে আসায় দ্রুত তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। তার পর উঁচু এলাকাও তলিয়ে যায়। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি বাড়ছে আর দৃশ্যপট পাল্টাচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ নিজেদের সম্বল না হারানোর জন্য ঝুঁকি নিয়ে পরিবারসহ যুদ্ধ করছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। কারো কারো বাড়িতে রান্না করা খাবার তো দূরের কথা একটু বিশুদ্ধ পানিও জুটছে না। আর কিছু মানুষ আশ্রয় চেয়েও পাচ্ছেন না।

কারণ জেলার সব ক’টি আশ্রয়কেন্দ্রে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। যারা ঠাঁই পেয়েছেন গাদাগাদি করে কোনোরকম দিন-রাত পার করছেন। বন্যায় বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া মানুষের আকুতি। তারা বাঁচতে চান। পরিবার-স্বজনদের নিয়ে তারা নিরাপদ স্থানে যেতে চান। কিন্তু বিপজ্জনক এলাকা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় অনেককে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। উদ্ধার টিম পৌঁছানোর জন্য বড় নৌকা মিলছে না। তবে দু’দিন ধরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করছেন। সেনাবাহিনী ছাড়া সরকারের অন্যান্য সংস্থাও বন্যাদুর্গতদের সাহায্যের জন্য মাঠে নেমেছে। বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খাবারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। পানিতে বাড়িঘর ভেসে যাওয়াতে চুলা ধরানো যাচ্ছে না। রান্না করার প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনা যাচ্ছে না। বাজারহাট দোকানপাট, হোটেল বন্ধ রয়েছে। পকেটে টাকা থাকলেও খাবার পাওয়া কষ্টকর।  অনেক এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত তারা ত্রাণের দেখা পাননি।

নানারকম দুর্ভোগ পোহানো সুনামগঞ্জের বাসিন্দারা বলেছেন, বড়রা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও শিশু খাদ্য ও বয়স্কদের জন্য ভোগান্তি বেশি হচ্ছে।  টানা চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। তাই অনেকেরই মোবাইলে চার্জ নেই। মোবাইল বন্ধ থাকায় আত্মীয়-স্বজনরা একে অন্যের খবর নিতে পারছেন না। টানা চারদিন যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সবার মনেই অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। ধর্মপাশা প্রতিনিধি জানান, উপজেলা সদর পানিতে ডুবে গেছে। অনেকে পাকা বাড়ির দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। চারদিকে পানি আর পানি। মানুষ গোলার ধান রক্ষা করতে পারছেন না। গবাদিপশুকে রাখার জায়গা পাচ্ছেন না। ক্রমাগত পানি বাড়ায় বাড়ছে আশ্রয়হীন মানুষের সংখ্যা। সেই তুলনায় উদ্ধার তৎপরতা কম।  ওদিকে উদ্ধার তৎপরতায় স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকেও বেগ পেতে হচ্ছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সাহায্যপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য যে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে সেখানেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কারণ কন্ট্রোল রুমের ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।  দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি জানান, দোয়ারাবাজারে মানুষের আহাজারি বাড়ছে। পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে এলাকার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গাছগাছালি।

সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই মিলছে না। খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। দোয়ারাবাজারে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড়বন্দ, মাইজখলা, লামাসানিয়া, পরমেশ্বীপুর, বিরসিংহ, নৈনগাঁও, মাঝেরগাঁও, মুরাদপুর, মাছিমপুর, দলেরগাঁও, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের এরুয়াখাই, চকবাজার,  তিলোরাকান্দি, বড়কাটা, সুরমা ইউনিয়নের ভুজনা নূরপুর, সোনাপুর, বৈঠাখাই, হাছনবাহার গ্রামের অনেক মানুষ গত তিনদিন থেকে আটকা পড়েছেন। তাদের অনেকেই না খেয়ে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামই তলিয়ে গেছে। মোবাইল ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বোগলাবাজার ইউনিয়নের আলমখালী, ক্যাম্পেরঘাট, ভোলাখালী, উরুরগাঁও, জিরাগাঁও বেড়িবাঁধ ভেঙে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ঘরে ঘরে পানি। সুরমা ইউনিয়নের টেংরাটিলার সবচেয়ে উঁচু জায়গা টেংরা স্কুল মাঠে মাথা সমান পানি। বৈঠাখাই, গিরিশনগর, শরীফপুর, মহব্বতপুর, কৈয়াজুড়ি, গোজাউড়া, টিলাগাঁওসহ সব ক’টি গ্রাম এখন পানিবন্দি। পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের সবচেয়ে উঁচু জায়গা  শ্রীপুর বাজারে কোমর সমান পানি।

উপজেলার সকল হাটবাজারের দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়েছে। দোয়ারাবাজার সদর, সুরমা, বোগলা, লক্ষ্মীপুর নরসিংপুর, মান্নারগাঁও, পান্ডারগাঁও, দোহালিয়া, বাংলাবাজার ইউনিয়নের সকল গ্রামের মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।   গত দু’দিনে দোয়ারাবাজারে অন্তত ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে জীবন বাঁচাতে গিয়ে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মহব্বতপুর এলাকার সাদ্দাম হোসেন ও জরিফ হোসেন নামের দুই সহোদর বানের জলে ডুবে নিখোঁজ হন। একজনের লাশ পাওয়া গেলেও জরিফ হোসেনের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। জরিফ এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। সমুজ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী তামান্না আক্তার (১৫) ও টিলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌরভ হাসান (১১) নৌকা থেকে পড়ে মারা যায়। এছাড়া শুক্রবার বজ্রপাতে বাংলাবাজার ইউনিয়নের বাঁশতলা এলাকার এক যুবক নিহত হন। দিরাই প্রতিনিধি জানান, দিরাই উপজেলায় টানা তিনদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পানি বেড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। এর আগে থেকেই প্লাবিত ছিল উপজেলার সব উপজেলার বাড়িঘর। পানিতে বাড়িঘর ভেসে যাওয়াতে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন দিরাই ডিগ্রি কলেজে।

সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেটে, গার্লস ও বয়েস কলেজে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ সঙ্গে করে গরু ছাগলও নিয়ে এসেছেন। খাবার সংকটের পাশাপাশি, নৌকা সংকটের কারণে অনেকে নিরাপদ স্থানে যেতে পারছেন না। এছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ বা সাহায্য চাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখন অনেক মানুষ ত্রাণের দেখা পাননি।  এদিকে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকায় আটকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে অনেকেই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। আব্দুর রহমান নামের একজন বলেন, আমার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে। সেখানেই আমার স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবা থাকেন। জরুরি কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। বুধবার সর্বশেষ তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না।  সোহেল রানা নামের এক চাকরিজীবী বলেন, সিলেট সদরে চাকরি করি। পরিবার থাকে সুনামগঞ্জ সদরে। বার কাউন্সিলের পরীক্ষা দিতে বুধবার ঢাকা গিয়েছিলাম। সেদিন আমার স্ত্রী বলেছিল মোবাইলে চার্জ নেই আর বন্যার পানি বাড়ছে। এরপর আর তাদের সঙ্গে কথা হয়নি। রনি নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমার বড় ভাই, ভাবী ও ভাতিজিরা সুনামগঞ্জ শহরে থাকেন। দু’দিন ধরে তাদের খোঁজ পাচ্ছি না। জানি না তারা কেমন আছেন?




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x