ডেস্কঃ আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে দলের আগের অবস্থানে অনড় আছে বিএনপি। আগ্রহ থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে চার সিটিতেই প্রার্থী হচ্ছেন না বিএনপি নেতারা। তবে, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে এখনো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্দিহান। তিনি শেষ পর্যন্ত কী করেন, তা দেখবে বিএনপি।
এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী এক নেতা।
তিনি জানান, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মঙ্গলবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পাঁচ সিটিতে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে যাদের নাম গণমাধ্যমে এসেছে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। গণমাধ্যমে খবর এলেও দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে কেউ প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বরিশালে মজিবুর রহমান সারোয়ার ও রাজশাহীতে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আগের নির্বাচনে প্রার্থী হলেও এবার তারা কেউ প্রার্থী হবেন না বলে স্থায়ী কমিটির নেতাদের আশ্বস্ত করেছেন। গাজীপুরেও প্রার্থী হওয়ার জন্য কেউ দলের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি। তবে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে এখনো দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সন্দিহান। তিনি শেষ পর্যন্ত কী করেন, তা দেখবে বিএনপি।
দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, রাজশাহীতে দলের একজন নেতা নিজের প্রভাব ধরে রাখতে অনুসারীদের কাউন্সিলর প্রার্থী করতে ভেতরে ভেতরে কাজ করছেন। এ খবর দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। একই ধরনের ঘটনা গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটে হচ্ছে কিনা তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, কেউ মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চাইলে তাকে দল থেকে বোঝানো হবে। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছে। আন্দোলনের মাঝপথে নির্বাচনে প্রার্থী হলে দলের কী ক্ষতি হতে পারে, এর আগের নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হয়ে কে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সে বিষয়গুলো তুলে ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করা হবে। তারপরও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, প্রার্থী হওয়ার জন্য দলের পদধারী কোনো নেতা ইন্ধন দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির নেতারা সবাই একবাক্যে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। তবে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করার আগে তিনি যাতে প্রার্থী না হন সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন।
বিএনপি আন্দোলনমুখী দল হিসেবে বাধ্য না হলে কোনো নেতাকর্মীকে এই মুহূর্তে বহিষ্কার করতে চায় না জানিয়ে একাধিক নেতা বলেন, দলের একজন কর্মীও যদি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি নির্বাচনে যায়, সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনরা কথা বলার একটা নতুন রাস্তা পাবে। আবার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে গেলে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে তাকে দল নিশ্চিতভাবে বহিষ্কার করবে। ফলে আন্দোলনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এজন্য নেতাকর্মীদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতারা বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বিএনপি নীতিনির্ধারকরা বলেন, প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে পদধারী যেসব নেতার নাম গণমাধ্যমে আসছে তা এক ধরনের সরকারি অপপ্রচার। কারণ যাদের নাম আসছে তারা কেউ দলের কাছে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। তারা মনে করেন, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তারের মতো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কাউকে কাউকে প্রার্থী করতে চাইবে সরকার। কিন্তু তাতে সরকার সফল হবে না বলে মনে করেন নেতারা।
পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর স্থানীয় সরকারের যে কয়েকটি নির্বাচন হয়েছিল কোনোটিতেই বিএনপি অংশ নেয়নি। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। এর আগে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ গেলে সে ব্যাপারেও আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।’
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন গাজীপুর ২৭ এপ্রিল, খুলনা ও বরিশাল ১৬ মে, রাজশাহী ও সিলেট ২৩ মে।
Leave a Reply