ডেস্কঃ ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ (১০ এপ্রিল)। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ১৬ আসামি সকলের মৃত্যুদণ্ডের রায় হলেও বাদীর আইনজীবী জানিয়েছেন, করোনায় ব্যাহত হচ্ছে উচ্চ আদালতে আপিলের বিচার। আলোচিত এ মামলায় দৃষ্টান্তমূলক রায় ঘোষণার প্রায় ৩ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর না হওয়ায় পরিবার ও স্বজনদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নিম্ন আদালতে রায়ের পর থেকে নুসরাতের পরিবার অভিযোগ করেছে, আসামির আত্মীয়-স্বজনরা ফেসবুকে ক্রমাগতভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। ঘটনার পর থেকে নুসরাতের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় দু’জন পুলিশ বাড়ি পাহারায় রয়েছেন।
নুসরাত হত্যার ৩ বছর উপলক্ষে রোববার (১০ এপ্রিল) সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া এলাকায় মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওই আয়োজনে আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক শাহ আলমসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা নুসরাতের সমাধিস্থলে পুস্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারতের আয়োজন করেছেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার যৌন নিপীড়নের শিকার হন নুসরাত জাহান রাফি। ওই ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেন। একই দিনই পুলিশ সিরাজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের অনুসারী ও সহপাঠীরা নুসরাত ও তার পরিবারের সদস্যদের চাপ দিতে থাকে।
২০১৯ সালের ৩রা এপ্রিল খুনিরা সিরাজের সঙ্গে কারাগারে পরামর্শ করে এসে ৪ঠা এপ্রিল মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে নুসরাতকে হত্যা করার পরিকল্পনা নেয়। ৬ই এপ্রিল সকালে নুসরাত আলিমের (এইএসসি) আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষা দিতে মাদরাসায় গেলে হল থেকে ডেকে সহপাঠিরা সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ১০ই এপ্রিল রাতে মারা যান নুসরাত।
এ ঘটনায় নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মৃত্যুর পরই ঘটনাটি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশী গণমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় তোলে। ঘটনাটি জড়িতদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তাকে থানায় ঢেকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা প্রচারের ঘটনায় ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন আইসিটি আইনে আরো একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে নুসরাতের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। মামলাটি তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ২৭শে মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন আদালত। ১৬ই জুন রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭ই জুলাই অভিযোগ গঠন শেষে ৩১শে জুলাই থেকে এ মামলায় স্বাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০শে নভেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ২৮শে নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। রায়ে ওসি মোয়াজ্জেমের ৮ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে ট্রাইব্যুনাল। এটি বাংলাদেশের প্রথম সাইবার ট্রাইব্যুনালের প্রকাশিত রায়।
Leave a Reply