মৌলভীবাজারের জুড়ীতে চুরির অপবাদে মারুফ আহমদ(১২) নামে এক শিশুকে স্থানীয় একটি দোকানের পিলারে বেঁধে নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৯টায় উপজেলার ভূয়াইবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
নির্যাতিত শিশু মারুফ উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বদরুল ইসলামের ছেলে। সে হাকালুকি আশ্রয়কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ট শ্রেণীতে পড়ে। এ ব্যাপারে নির্যাতিত শিশুর পিতা বাদী হয়ে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে জুড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নির্যাতিত শিশুর পিতা বদরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভূয়াইবাজারের অধির দাসের দোকানে তার ছেলে মারুফ যায়। অধির দাসের ছেলে অসীম দোকানের বাহিরে ছিল। দোকানে কাউকে না পেয়ে তার ছেলে দোকানের টেবিলের উপর ১৩০ টাকা দেখতে পেয়ে তা হাতে নেয়। এসময় অসীম এসে তার হাতে টাকা দেখে তাকে চুর বলে সাব্যস্থ করে। পরে বাজারের আরেক ব্যবসায়ী মাসুক মিয়ার কাছে তাকে নিয়ে যায়।
মাসুক মিয়া শিশু মারুফকে টাকা চুরির অপবাদে একটি দোকানের পিলারে দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে বেঁধে মারধর শুরু করেন। পরে পাশের দোকানদার ময়নুল ইসলাম ও সিএনজি চালক ফয়ছল এসেও তাকে বেধড়ক মারধর করেন। ছেলেকে বেঁধে মারধরের খবর পেয়ে বদরুল সেখানে গিয়ে তার ছেলেকে বাঁধা অবস্থায় মারধর করতে দেখেন। এসময় তার ছেলের অপরাধ জানতে চাইলে তারা বলেন সে টাকা চুরি করেছে।
প্রায় তিন ঘন্টা এভাবে বাধা অবস্থায় থাকার পর স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ মিয়ার উপস্থিতিতে মারুফের চাচা মনফর আলীর জিম্মায় দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যার দিকে তার ছেলে মারুফ বমি করা শুরু করলে চিকিৎসার জন্য জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাকে ভর্তি করেন। শুক্রবার চিকিৎসা শেষে তাকে নিয়ে বাড়ী আসেন। ঐদিনই তিনি বাদী হয়ে এ ব্যাপারে তিনজনের নাম উল্লেখ করে জুড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মাসুক আহমদ শনিবার বিকালে বলেন, সে চুরি করেছে। এজন্য দোকানদার তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন। এসময় সে চুরির কথা স্বীকারও করেছে। আমি শুধু তাকে ছোট একটি রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছিলাম যাতে দৌড়ে যেতে না পারে। তাকে কোন মারধর করা হয়নি। ১০-১৫ মিনিট পরে তার চাচার জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত ময়নুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে কোন ধরনের মারধর করিনি। তবে সে চুরি করেছে এটা বাজারের সবার সামনে সে স্বীকার করেছে।
প্রতিবেশী রেজাউল করিম বলেন, সে ছোট শিশু যদিও টাকা চুরি করে ফেলে তারপরও তাকে এভাবে রশি দিয়ে বেধে মারা টিক হয়নি। যার দোকানে চুরি করেছে তিনি তো তাকে মাফ করে দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আজাদ মিয়া বলেন, আমি খবর পেয়ে সেখানে যাই। আমি যাওয়ার পর বাঁধ খুলে তার চাচার জিম্মায় ছাড়িয়ে দেই।
জুড়ী থানার ওসি সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি, সরেজমিনে পুলিশ গিয়ে তদন্ত করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply