1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

ঢলের পানিতে ডুবছে কৃষকের সোনা

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২২
  • ২০৬ বার পঠিত

ডেস্কঃ এখন আর আশঙ্কা নয় সত্যিই ঢলের পানিতে ডুবছে হাওর। শ্রমিক সঙ্কটে তলিয়ে যেতে শুরু করছে ফসল।  সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে শুরু থেকে জানিয়ে এলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দোষারোপ করে দায় সারছে। আর কৃষি বিভাগ কৃষকদের দ্রুত ধান কেটে তোলার পরামর্শ দিয়েই খালাস! ওদিকে কৃষকেরা শ্রমিকের অভাবে ধান কাটতে পারছেন না।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় দুটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। প্রাণপণ চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারেনি স্থানীয়রা। আজ রোববার সকালে উপজেলার কুশিয়ারা নদী-তীরবর্তী রমাপতিপুর গ্রামের গলাখাল বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকে পড়ে। এর আগে গত রাতে নলজুর নদীর পাড় উপচে হাওরে পানি ঢুকে আধা পাকা বোরো ফসল তলিয়ে যায়। ফলে কৃষকেরা পড়েছে মহাবিপদে। আতঙ্কিত কৃষকেরা আধা পাকা ধান কেটে ফেলেছে।

এদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন হাওরের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে। এতে গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ‘গলগলিয়া ও পানার ‘ হাওরের প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অপরদিকে গুরমার বর্ধিতাংশ এই বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার কারণে পার্শ্ববর্তী মধ্যনগর উপজেলার ছোটবড় কয়েকটি হাওর হুমকির মুখে রয়েছে।

গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের আসামপুর এলাকায় নলজুর নদীর পাড় উপচে স্থানীয় একটি হাওরে পানি ঢুকছিল। হাওরের ফসল রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে স্থানীয়রা। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পানি ঠেকাতে লড়াই করেন কৃষক ও এলাকাবাসী। এরপরও আর শেষ রক্ষা হয়নি। হু হু করে পানি ঢুকছে হাওরে। ফলে ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

আজ রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আসামপুর গ্রামের স্থানীয় হালির হাওরে পানি প্রবেশ করে খেতের ফসল পানিতে ডুবে যাচ্ছে। স্থানীয় কিছু সংখ্যক কৃষক আধা পাকা ধান কাটছেন। এ সময় হাওরে কথা হয় আসামপুর গ্রামের কৃষক মোহন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘হাওরে পানি ঢুকে যাওয়ায় খেতের আধা পাকা ধান আমার সন্তানদের নিয়ে কাটছি। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে পুরো হাওর পানিতে তলিয়ে যাবে।’

আরেক কৃষক মানিক মিয়া জানান, গত দুই দিন ধরে হাওর রক্ষায় নদীর পানি ঠেকাতে আমরা লড়াই করছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা গেল না। তিনি বলেন, এ বছর ৬ কেদার জমিতে বোরো আবাদ করেছি। ধান না পাকায় কাটতে পারিনি। এর মধ্যে হাওরে পানি ঢুকে সব জমির ধান তলিয়েছে। সারা বছর দুঃখ কষ্টে থাকতে হবে বলে এই কৃষক জানিয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানান, উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই দিন ধরে আসামপুর এলাকায় নলজুর নদীর পাড় দিয়ে পানি প্রবেশ রোধে স্থানীয় কৃষকেরা লড়ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান দিয়ে নদীর পাড় উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করছিল। বিষয়টি স্থানীয় মসজিদের মাইকে জানানো হলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পানি ঠেকাতে কাজ করছিলেন। তাদের সহযোগিতা করতে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকজন নিয়ে চেষ্টা চালান। রাত ১২টার দিকে সব চেষ্টা ব্যর্থ করে হাওরে হু হু করে পানি প্রবেশ করতে থাকে।

পাউবো জগন্নাথপুর উপজেলা শাখার মাঠ কর্মকর্তা উপসহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজি বলছেন, যে স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে ওই জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় নয়।

আর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, ‘হালির হাওরে ৩৭০ একর জমিতে এবার আবাদ করা হয়েছে। এখনো হাওর তলিয়ে যায়নি। কৃষকেরা ধান কাটছেন।’

পরিস্থিতি জানতে যোগাযোগ করা হলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করেও হাওর রক্ষা করা যায়নি। ধান যাতে কৃষকেরা দ্রুত ঘরে তুলতে পারেন এ জন্য আমরা কিছু ধান কাটার শ্রমিক দিয়েছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নলজুর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আবারও ১০টি বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এদিকে আজ সকাল থেকে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরে বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে থাকে। অপরদিকে বেলা সাড়ে ৩ টায় গুরমার হাওর বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের ২৭ নম্বর ফসল রক্ষা বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে তাহিরপুর উপজেলার গলগলিয়া ও পানার হাওরে পানি ঢুকে প্রায় ৩০০ বিঘা জমির বোরোধান তলিয়ে যায়। ফলে ডুবে যাওয়া পাকা-আধপাকা ধান নিয়ে দিশেহারা স্থানীয় কৃষকেরা।

বিকেলে সরেজমিনে টাঙ্গুয়াসহ গুরমার হাওর ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে হাওরের চারদিকেই উঁচু বাঁধগুলো উপচে পানি প্রবেশ করছে।

পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান সেলিম বলেন, গুরমার বর্ধিতাংশ উপপ্রকল্পের  ২৭ নম্বর বাঁধটি কেনো ভেঙে গেছে এবং প্রকল্পের কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি-না তা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। বাঁধের কাজে গাফিলতি থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও মো. রায়হান কবির বলেন, ‘নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলেও হয়তোবা বাঁধটি ভেঙে গেছে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করব।’




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x