1. admin@sylheterkujkhobor.com : admin :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন

সিলেটে পর্যটন এলাকার উন্নয়ন নেই তবুও চাঁদাবাজি জনমনে চরম ক্ষোভ

সিলেটের খোঁজখবর
  • আপডেট সময় : শনিবার, ৭ মে, ২০২২
  • ৩৬৮ বার পঠিত

পর্যটন এলাকায় ‘চাঁদাবাজি’ নিয়ে চলছে চরম ক্ষোভ। জাফলংয়ের ঘটনার পর সিলেটজুড়ে এই ক্ষোভ তীব্র হয়েছে। পর্যটন এলাকার উন্নয়ন নেই, বাড়ানো হয়নি পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা। এরপরও টোলঘর বসিয়ে আদায় করা হচ্ছে প্রবেশ ফি। অথচ সিলেটের এসব পর্যটক এলাকায় কোনো দিনই প্রবেশ ফি নেয়া হয়নি। দাবি উঠেছে প্রবেশ ফি উঠিয়ে নেয়ার। এতে ক্ষুব্ধ মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন। গতকাল বিকালে জাফলংয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছে ছাত্রদের কয়েকটি সংগঠন। সিলেটে রয়েছে বহুল পরিচিত ১০টি পর্যটনস্পট। অন্যতম হচ্ছে জাফলং, রাতারগুল, সাদাপাথর, বিছনাকান্দি গোটা বছরই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা এসব এলাকায় ভিড় জমান। জাফলংয়ে হঠাৎ করেই নেয়া হয়েছিল এই সিদ্বান্ত। তখন জেলা প্রশাসক ছিলেন কাজী এমদাদুল ইসলাম। জেলা পর্যটন কমিটির সভা করে তিনি জাফলংয়ে টোল বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তার এই সিদ্বান্ত বাস্তবায়ন করেন ইউএনও তাহমিলুর রহমান। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে জাফলংয়ে চারটি স্থানে টোলঘর বসিয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে ১০ টাকা প্রবেশ ফি উত্তোলন শুরু হয়। তদারকিতে ইউএনও থাকলেও মূলত জাফলংসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের এসব টোলঘরে দায়িত্ব দেয়া হয়।

করোনাসহ নানা কারণে এতদিন জাফলংয়ে পর্যটকদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। তবে এবারের ঈদে পর্যটকদের বাঁধভাঙা ঢল নামে। এতে করে বাড়তি জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশাসনের টোলঘর হলেও এখানে দায়িত্বে থাকতো এলাকার লোকজন। যার নেতৃত্বে ছিলেন ইকবাল নামের একজন। মূলত তিনিই জাফলং পর্যটনস্পটের সবকিছু দেখভাল করেন। গত বৃহস্পতিবার টোলঘরে টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে ঘটেছে আলোচিত ঘটনা। প্রকাশ্য লাঠি দিয়ে পর্যটকদের পিঠিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকরা। তাদের হামলা থেকে বাদ যায়নি নারী ও শিশুরা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত রাধানগরের সেলিম। লাঠি হাতে তাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হতে দেখা গেছে। এ ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। ধিক্কার শুরু হয় সর্বত্রই। জাফলংয়ে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা ওই সময় ব্যস্ত ছিলেন নদীতে। এক পর্যটক পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তাকে উদ্ধার করতে সবাই ব্যস্ত ছিলেন। টোলঘরের ঘটনা শোনার পর পুলিশের একটি অংশ উপরে আসে। এরপর তারা হামলাকারী স্বেচ্ছাসেবকদের ওখানে আটকে রাখে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জাফলংয়ে প্রতি শুক্র ও শনিবার পর্যটক বেশি হয়। এ কারণে ওই দুই দিন ২-৩ লাখ টাকা প্রবেশ ফি আদায় করা হয়। ঈদ মৌসুমে প্রায় তিনগুণ বেশি টাকা আদায় হয়ে থাকে।

জাফলংয়ে প্রবেশ ফি ব্যবস্থা চালু হওয়ার সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল; পর্যটকদের সুবিধা বাড়াতে এই টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নিয়োজিত প্রায় ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবকের বেতন দেয়া হয় ওই টাকা থেকে।

গোয়াইনঘাটের ইউএনও তাহমিলুর রহমান জানিয়েছেন, জাফলংয়ে প্রবেশ ফি নেয়ার সিদ্ধান্তটি তার নয়। সিলেটের জেলা প্রশাসকের পর্যটক কমিটি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর তাকে জানানো হলে তিনি গোয়াইনঘাটে বৈঠক করে প্রবেশ ফি নেয়ার কার্যক্রম চালু করেন। এই টাকা দিয়ে পর্যটকদের জন্য ওয়াশরুম, কাপড় পরিবর্তন রুম, ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার পর সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান তাৎক্ষণিক আগামী ৭ দিনের জন্য প্রবেশ ফি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেন। এ কারণে গতকাল থেকে জাফলংয়ে আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে কোনো প্রবেশ ফি নেয়া হয়নি। আগে জাফলংয়ের প্রবেশমুখ, সোনাটিলা এলাকায় দু’টি ও বল্লাঘাট এলাকার দু’টি স্থানের প্রবেশ মুখে টোলঘর বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হতো।

জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, আপাতত ৭ দিনের জন্য প্রবেশ ফি না নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। যেহেতু আগে জেলা প্রশাসনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল; এ কারণে আরেকটি সভা করে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। আগামীতে প্রবেশ ফি নেয়া হবে কিনা- সেটি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর করা হবে এবং আগামী ৭ দিনের মধ্যে সেটি করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে শুধু জাফলং নয়, গোয়াইনগাটের আরেক পর্যটনস্পট রাতারগুলেও নেয়া হচ্ছে প্রবেশ ফি। বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে ৫৭ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বনবিভাগ ও স্থানীয় একটি কমিটির ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই টাকা আদায় করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ১০ মাসে এই স্পট থেকে অর্ধকোটি টাকার মতো চাঁদা আদায় করা হয়েছে। উত্তোলিত টাকার অর্ধেক ব্যয় করা হবে রাতারগুলে ও অর্ধেক যাবে সরকারি কোষাগারে; এমন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাতারগুলে উপস্থিত ছিলেন। জাফলংয়ের বিতর্কিত ঘটনার পরও রাতারগুল থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। তবে বিছনাকান্দি, সাদাপাথর, লালাখালসহ আরও কয়েকটি স্পটে কোনো প্রবেশ ফি আদায় করা হচ্ছে না।

৯৯৯ ফোন দিয়ে সাড়া পাননি পর্যটকরা: জাফলংয়ে হামলার ঘটনার সময় পুলিশের জরুরি নম্বর ৯৯৯ কল করেও সাড়া পাননি আক্রান্ত হওয়া পর্যটকরা। বরং ৯৯৯ থেকে তাদের বলা হয়, হামলার ঘটনার ছবি হোয়াটসঅ্যাপে দিতে। গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলা দায়েরের পর আক্রান্ত পর্যটকরা এ কথা জানান। ঢাকার কদমতলী থানাধীন শ্যামপুর জুরাইন এলাকার সম্রাট সরকার ঘটনার সময়ের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ‘আমরা ঘটনার পর পরই ৯৯৯-এ কল করে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আমাদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে জানালে ৯৯৯-এর ফোন রিসিভকারী পুলিশ মাথা ফাটানোর ছবি পাঠাতে বলেন।’ জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর হামলাকারী ৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে আদালতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।

গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, হামলায় আহত সুমন সরকার বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

মামলার আসামিরা হলো- গোয়াইঘাটের পন্নগ্রামের মৃত রাখা চন্দ্রের ছেলে লক্ষণ চন্দ্র দাস, ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো. সেলিম আহমেদ, নয়াবস্তি এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে সোহেল রানা, পশ্চিম কালীনগর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ইসলামপুর রাধানগর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দীনের ছেলে জয়নাল আবেদীন।

আহত সুমনের স্ত্রী সুমি সরকার বলেন, ‘তারা আমার দেবর ও স্বামীকে মারপিট করছিল। সন্তান কোলে নিয়ে কাকে বাঁচাবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এ ঘটনার পর তারা তটস্থ হয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছিলেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় তারা এসে মামলা করেছেন।’




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর










x